" বারো মাসে তের পার্বন " এর শেষ উৎসব গাজন, কাশীরাম দাসের জন্ম ভিটে সিঙ্গিতে মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে গাজন উৎসব

গৌরনাথ চক্রবর্ত্তী,পূর্ব বর্ধমান,১২ এপ্রিল:
শুরু হয়েছে শিবের গাজন।বাংলা বছরের শেষ উৎসব হল গাজন।পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে এই গাজন উৎসব।মুলত মহাদেবকে তুষ্ট করতেই এই গাজন উৎসবের আয়োজন।
কাটোয়া ২নংব্লকের জগদানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আমডাঙ্গা গ্রামে চলছে বুড়োশিবের গাজন।বুড়োশিব প্রাচীন ও জাগ্রত ঠাকুর।চিরাচরিত প্রথা মেনে চলছে গাজন।প্রায় ৫০০বছরের প্রাচীন ঠাকুর।আমডাঙ্গা গ্রামের রায় পরিবারের ৮৬ বছরের বয়স্ক ও ঘোড়ানাশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক দক্ষিণারঞ্জন রায় বললেন,আমাদের বংশধর তারাপদ রায় স্বপ্নাদেশ পান যে,ঠাকুর বলেন ঘোড়ানাশের রায় পরিবারে আমি আছি।কিন্তু এখানে আমি সন্তুুষ্ট নয়।তোদের পরিবারে পুজো নেব।তারপর ঠাকুর এখানে চলে আসেন। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শুরু হয়েছে গাজন উৎসব।গাজন উৎসবের মুলত তিনটি অংশ ঘাট সন্ন্যাস,নীলব্রত ও চড়ক,আজকে গঙ্গাস্নান।
ঠাকুর গঙ্গাস্নান যায় তাই আজ রায় পরিবারের কোনো উনুন জ্বলে না,রান্না হয় না।
এই ঠাকুরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল,কারো বাড়িতে ঠাকুর যান না। প্রতিটি বাড়ির দুয়ারে গিয়ে পুজো নেন।গ্রামের ছোট-বড় সকলেই আনন্দে মাতোয়ারা।
বাংলা মহাভারত রচয়িতা কাশীরাম দাসের জন্মভিটা কাটোয়ার সিঙ্গি গ্রামে।সেখানে রয়েছে দক্ষিণাশ্বরের আদলে বুড়োশিবের মন্দির।প্রায় ৪০০বছরের প্রাচীন এই ঠাকুর।এবারে প্রায় ৩৫০জন গাজনে সন্ন্যাসী হয়েছে।গাজন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন'রকম খেলা দেখানো হয়।মানুষের মরার মাথা নিয়েও খেলা দেখানো হয়।বহুলোক সমাগম হয় গাজনে।সিঙ্গি ছাড়াও পাশ্ববর্তী গ্রাম থেকে ভক্তরা এখানে আসেন।এই কদিন গাজন উৎসবে মাতোয়ারা সিঙ্গি গ্রাম।কালকে পাতা নাচ সহ গঙ্গাস্নান যাওয়ার দৃশ্য দেখতে রাস্তার দুধারে প্রচুর মানুষ জমায়েত হন।
কাটোয়ার করুই গ্রামে বুড়োশিব ও পার্বতী গাজন হয়।বুড়োশিব সারাবছরই পুকুরে জলের তলায় থাকেন।গাজন উপলক্ষ্যে বড় মেলায় হয়।আতসবাজি প্রর্দশনী হয়।কলকাতার বিখ্যাত নামকরা যাত্রাদলের তিনরাত্রি যাত্রা হয়।যারজন্য দর্শকদের কোনো টিকিট লাগে না।
এছাড়াও কাটোয়ার দেয়াসিন, মুলগ্রাম,নন্দীগ্রাম, পোষ্টগ্রাম,বাকসা,শ্রীবাটী সহ বিভিন্ন জায়গায় গাজন উৎসব চলছে।বর্ধমান রাজা জগৎরায়ের পুত্র কীর্তিচাঁদ রায় দাঁইহাটে অনেকগুলি শিবমন্দির ও একটি আবাসগৃহ নির্মাণ করেছিলেন। বিকিহাটে হরগৌরি মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।বর্তমানে বিকিহাট দাঁইহাট পৌরসভার ১৪নম্বর ওর্য়াড়।হরগৌরী ঘিরে শুরু হয়েছে গাজন উৎসব। গাজন উৎসব মুলত মহাদেবকে তুষ্ট করতেই করা হয়।বাংলাবছরের শেষ উৎসব হলগাজন।এত সব জায়গায় শিবের গাজন হলেও কাটোয়ার মুস্থূলী গ্রামে শিবের গাজন এবছর হচ্ছে না। কারণ হিসাবে জানা যায়,কোনো ভক্ত বা সন্ন্যাসী না হওয়ায় এই নিয়ে পরপর দুবছর গাজন বন্ধ হল।
Leave a Comment