Breaking News

ভূমিকম্পের ভয়ঙ্কর স্মৃতি.. গল্পকথায়: শান্তনু।।

Image
 

বিশ্বকর্মা পুজো মানেই ১৭-ই সেপ্টেম্বর..ছোটবেলা থেকে সেটাই জানা ছিলো..কিন্তু তিথির নিয়মে ২০১১ সালে হঠাৎ করে সেই পুজোটাই ১৮ তারিখ হয়ে গিয়েছিল। আগের দিন থেকেই প্রকৃতি ছিল বিরূপ..সারাদিন ঝোড়ো হওয়া..সাথে অবিরাম ঝিরঝিরে বৃষ্টি। ১৮ তারিখ বিশ্বকর্মা পুজোর দিন বিকেলের দিকে বৃষ্টি কমলেও..আকাশের মুখ ছিলো সেদিন কেমন যেন একটু অন্যরকম..ভীষণ রকম ভারাক্রান্ত ! সবেমাত্ৰ তখন সন্ধ্যে হয়েছে..কেঁপে উঠেছিল পুরো উত্তরবঙ্গ আর সিকিম ! রিক্টার স্কেলে ৬.৯..ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল উত্তর সিকিমের 'মঙ্গন'। ওইদিন আমি শিলিগুড়িতে..সামনের বাড়ির ইটের প্রাচীরটা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিল রাস্তার উপরে ! যে যেদিকে পারছে ছুটছে..কিন্তু কোথায় গেলে বাঁচা যাবে তা কেউ জানে না ! কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ির সামনে চলে এসেছিল টিভি মিডিয়ার লোকজন। আমার একটা হিন্দিতে ইন্টারভিউ-ও নিয়েছিলো সেইসময়..কিছু সময়ের মধ্যেই আবার সেটা দেখিয়েছিল খবরের মাঝে..বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে। রাতের দিকে ফোনগুলো আবার কাজ করা শুরু করতেই বিভিন্ন জায়গার খবর আসতে শুরু করেছিল..সেইসাথে টিভির পর্দায় ভেসে উঠছিল ক্রমাগত বেড়ে চলা ভূমিকম্পে হতাহতের সংখ্যা ! আমার কর্মক্ষেত্র যেহেতু গ্যাংটক, তাই ভীষণ ভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। পরদিন..মানে ১৯-শে সেপ্টেম্বর সড়কপথে সিকিম ছিল পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। সেনা নামিয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রাস্তার ধস সরিয়ে কুড়ি তারিখে রাস্তাকে কোনোক্রমে ছোট গাড়ি চলাচলের উপযোগী করা হয়েছিল। ওইদিন সিকিমে গিয়েছিলেন বাংলার মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে নিজস্ব ছোটো গাড়ি..অফিসের আরো দুজনের সাথে আমিও বের হয়ে পড়েছিলাম শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক-এর উদ্দেশ্যে। সেভক পাহাড় ছাড়িয়ে একটু ওপরে ওঠার পর থেকেই সেসময় রাস্তার যে ভয়ানক দৃশ্য দেখেছিলাম সেটা হয়তো সারা জীবনেও ভুলতে পারবো না ! রাস্তার পাশের টেলিফোনের পোস্টগুলো সব দুমড়েমুচড়ে একাকার..দু'ধারের যত বাড়িঘর..সবগুলোতেই বিশাল বিশাল ফাটল ! কোথাও আবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির ওপরে পড়েছে বিশাল এক পাথর..গাড়ি পড়ে রয়েছে 'চিড়ে চ্যাপ্টা' হয়ে ! কোথাও পাহাড়ে এমন ধস নেমেছে..দেখে মনে হচ্ছিলো ঠিক মাখনে গরম ছুরি চালানোর মতো..কেউ যেন পাহাড়টাকে কেটে নিচে নামিয়ে দিয়েছে ! একেকটা মাঝারি মাপের ঘরের সমান বড় বড় পাথর উপর থেকে পড়ে ঝুলে রয়েছে পাহাড়ের গায়ে..কোথাও আবার সেই পাথরই বন্ধ করেছে যাতায়াতের রাস্তা ! 'বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন' সেই ধস সরিয়ে চেষ্টা করে চলেছে রাস্তাকে পুরোনো অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে। বেশিরভাগ বাড়ির লোকজন নিজের বাড়িতে না থেকে সব রাস্তায়। ওই ভয়ঙ্কর সব দৃশ্য দেখতে দেখতে বহুকষ্টে সেদিন পৌঁছেছিলাম গ্যাংটকে। গ্যাংটক শহর তখন বিভিন্ন চ্যানেলের 'মিডিয়া ভ্যান'-এ ভর্তি। ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে আকাশে চক্কর কাটছে হেলিকপ্টার। আসলে সিকিম তথা উত্তরবঙ্গের মানুষ..ভূমিকম্প কতটা ভয়ের, কতটা আতঙ্কের হতে পারে সেটা বোধহয় প্রথম উপলব্ধি করেছিল ২০১১ সালে। এরপরেও ২০১৫ সালের এপ্রিল এবং মে মাসে আরও বড় মাপের নেপালের ভূমিকম্প বারেবারে কাঁপিয়েছে উত্তরবঙ্গ আর সিকিমের মাটি। তবুও ২০১১ সালের পর থেকে বিশ্বকর্মা পুজোর সাথে ভূমিকম্পের কোথায় যেন একটা যোগসূত্র তৈরি হয়ে গেছে ! দেখতে দেখতে সাত-সাতটা বছর পার হয়ে গেল..তবুও সেই ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের স্মৃতি অনেকের মনেই এখনো অমলিন। পার হলো আরও একটা 'ভূমিকম্প দিবস'..১৮-ই সেপ্টেম্বর ! আর কোনো 'অসুর' বা কোনো 'দৈত্য' যেন মাটির গভীরে থেকে মাথা নাড়াতে না পারে..সেটাই সর্বদা উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা..!!

Share With:


Leave a Comment

  

Other related news